বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন

আইনী লড়াইয়ে নিজেদের সম্পত্তি ফিরে পেল এতিমখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

সকল অপেক্ষার পালা শেষ হলো আইনী লড়াইয়ে নিজেদের সম্পত্তি ফিরে পেয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা। গতকাল বুধবার ঢাকা ১৮ তলা ভবন ও যাবতীয় স্থাপনা এতিমখানার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরআগে আজিমপুর এতিমখানার সম্পত্তির ওপর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য কনকর্ডের করা রিভিউ খারিজ করে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে কনকর্ডের নির্মাণ করা ওই ভবন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে এতিমখানার সম্পত্তি হিসেবে ৩০ দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৯ জুন বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ভবনটি হস্তান্তরের সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, এই জায়গাটি দেওয়ার উদ্দেশ্যই ছিল এটি এতিমদের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে। যে কারণে আজ আমরা এতিমখানার প্রশাসকের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করলাম।

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, রায়ের পর আমরা ৩০ দিন অপেক্ষা করেছি। এরপরও কনকর্ড ভবনটি আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলাম। আজ জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ভবনটি আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হলো।

এর আগে রায় বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময় ৩০ দিনের মধ্যে কনকর্ডকে এতিমখানা ভবনটি বুঝিয়ে দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর এতিমখানার পক্ষে আবেদন করা হয়। গত ৪ আগস্ট এ আবেদন করা হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার পক্ষে বর্তমান প্রশাসক ও সমাজসেবার অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেন। হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), এতিমখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, আজিমপুর এতিমখানার ২ বিঘা সম্পত্তি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কনকর্ডকে ভবন নির্মাণের জন্য তৎকালীন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারি চুক্তি করে হস্তান্তর করলে ১৮তলা ভবন নির্মাণ করে কনকর্ড গ্রুপ। মিডিয়ায় ওই অবৈধ হস্তান্তরের সংবাদ প্রচারিত হলে জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন করে আজিমপুর এতিমখানার সম্পত্তি রক্ষায় নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই রায় দেয়। রায়ে কনকর্ডের তৈরি ১৮ তলা ভবন এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে কনকর্ডকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে এতিমখানাকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন, ব্যর্থতায় জেলা প্রশাসককে ওই ভবন এতিমখানাকে ৭ দিনের মধ্যে দখল বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেন।

এতিমখানা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন সরকারের নারী এমপি বেগম সামছুন্নাহার, সামছুন্নাহারের ছেলে ও কমিটির সহ-সভাপতি সানী এবং সাবেক সেক্রেটারি জিএ খানসহ কমিটির সব সদস্য মিলে ২০০৪ সালে এতিমখানার ৮.৫ বিঘা সম্পত্তি কনকর্ড কনডোমিনিয়াম লিমিটেডের (ডেভেলপার) সঙ্গে যৌথ উন্নয়নের নামে অসম, জালিয়াতি ও বেআইনি চুক্তি করেন। ওই জমির মধ্যে ২ বিঘা (৪০) কাঠা জমির ওপর ডেভেলপার কোম্পানি ২০১২ সালে একটি ১৮ তলা আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে, যার অনুপাতে এতিমখানা পাবে ১২ শতাংশ, ডেভেলপার ৮৮ শতাংশ এবং সাইনিং মানি বাবদ এতিমখানাকে দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা।

কমিটির সদস্যরা যোগসাজশের মাধ্যমে, আজীবন সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ও লিজের শর্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, এতিমখানার গঠনতন্ত্রের বিধি ভঙ্গ করে, এতিমদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে, নিজেদের লাভের উদ্দেশ্যে এতিমখানার জমি বিক্রি করেছেন। এসব কর্মকাণ্ডে দায়ভার ২০০৩ সালের কার্যনির্বাহী কমিটি ওপর বর্তায় কারণ কার্যনির্বাহী কমিটিকে এতিমখানার গঠনতন্ত্র লিজ করা সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করার কোনো ক্ষমতা দেয়নি। কার্যনিবাহী কমিটি ও ডেভেলপার কোম্পানির প্রতারণার জালে এতিমদের ঠকিয়ে উভয়ই লাভবান হয়েছে।

বিবাদীদের কার্যকরী ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করে এতিমখানা পরিচালনার নির্দেশনাও দেয় আদালত এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে এতিমখানার সম্পত্তি হস্তান্তরের জালিয়াতি-প্রতারণা হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে কনকর্ড গ্রুপের এমডি মীর শওকত আলি আপিল বিভাগে আপিল করেন। আপিল বিভাগ তার আপিল খারিজ করে দেয়। এরপর তারা রিভিউ আবেদন করেন, সেটিও ৯ জুন সর্বোচ্চ আদালত খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশনা বহাল থাকে।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x