বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন

একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য বিয়ে কাহিনী

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নিউজটি শেয়ার করুন

গায়ে হলুদ প্রোগ্রামের প্রস্তুতি চলছে।
পার্থ দা তার দলবল নিয়ে হাজির।
সবাই বলছে গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম নাকি নাচ-গান ছাড়া হয়-ই না, তাই পার্থদাকে স্পেশাললি নিয়ে আসা।
কলেজ-ভার্সিটি-কলিগ মিলে প্রায় এক’শজনের মতো এসেছেন। অনেক দিন পর দেখা, তাই বাহিরে বসে সবাই গ্রুপ আড্ডায় মেতেছে। আমার কথা কারো মাথায় আছে বলে মনে হয় না। ওইদিকে সবাই যার যার সাঁজ নিয়ে ব্যস্ত। রাতে যে এখনো কিচ্ছু খাইনি, সে খেয়াল কারো নেই।

ভাবছি, কাল এইসময়ে আমার পাশে বধু সেঁজে যে বসে থাকবে তাঁরও মনে হয় এখন এক-ই অবস্থা।
তাঁকে একটা কল দেয়া যেতে পারে
কিন্তু চেনা-জানা খুব কম,
মাত্র দু‘বার তাঁর সাথে দেখা ও কথা হয়েছে।
কি জানি কি মনে করে এসব ভেবে আর কল দিতে ইচ্ছে করে নি।

পার্থ দা ইতোমধ্যে গান শুরু করে দিলেন-
“সময় আর কাটেনা এলোমেলো যত সব ভাবনা
হৃদয় অবকাশে অভিমান ছুয়ে যায়
গল্পে রাত যায় বসে দাওয়ায়
স্থৃতিগুলো মাঝে মাঝে ঝিম ধরায়(২)

জানিনা কোথায় কোন সীমানায় খুজি তোমায়
ব্যস্ততা ছুটি নিয়ে পালিয়ে যায়
ক্লান্তির কাছে তাই ক্ষমা চাই(২)
জানিনা কোথায় কোন সীমানায় খুজি তোমায়……!!”

সবাই এখন গানের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
আমি নিয়ন আলোয় আগামি দিনগুলো দেখছি।
একটা অজানা ভয় গ্রাস করছে আমাকে।
স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করছি,
কিন্তু সকল চেষ্টা বৃথা মনে হচ্ছে।
হঠাৎ কারো ধাক্কা খেয়ে হুশ ফিরে পেলাম।
আপু এসেছেন আমাকে নিয়ে যেতে,
হলুদ লাগানো শুরু করবেন।
বাধ্য ছেলের মতো আপুকে অনুসরণ করছি।
স্টেজে গিয়ে বসলাম।
গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে দেয়া হলো।
শুরু হলো হলুদ মাখানো।

ভাবছি, আমার হবু-স্ত্রীকেও হয়তো এইভাবে হলুদ লাগিয়ে হলদেপুরী বানানো হচ্ছে।
এ অব্স্থায় তাঁকে দেখতে খুব ইচেছ করছে।
সেদিন তাঁর সাথে কথা বলে মনে হলো,
খুব কম কথা বলে সে।
হতে পারে প্রথম দেখা,
এছাড়া আমি একজন অপরিচিত মানুষ,
তাই হয়তো কম কথা বলা।

এখন হাতে মেহেদী লাগানো শুরু।
রাত প্রায় শেষ প্রহরে।
কেউ কেউ ঘুমানোর জন্য চলে গেছেন,
আবার অনেকে-ই বাহিরে বসে ঢলছেন।
পার্থদার গানের অধ্যায় শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
দু‘হাত সাঁজানো হলো মেহেদী পাতায়।
হাতে মেহেদী নিয়ে ঘুমাতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
কিন্তু দু‘নয়নের ক্যানভাসে তো এক চিলতে ঘুম নেই।
কাজেই ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করে কী লাভ !

বিয়ের দিন সকাল।
সবাই এখনো গভীর ঘুমে বিভোর।
সারা রাত ঘুমাইনি।
চোখ দু‘টি সকালের রক্তিম সূর্যের মতো হয়ে আছে।
সময় মনে হয় খুব দ্রুত যাচেছ এখন।
একটু পরে-ই আমরা রওনা দেবো।
জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু হবে।
দু‘জনের স্বপ্নগুলো অদল-বদল করে নেব।
এতোদিনের সঞ্চিত সাঁজানো স্বপ্নগুলোকে দু‘জন মিলে পূর্ণতা দেব।
অনেক প্ল্যান করে রেখেছি আমি তাঁকে নিয়ে।
আমাদের প্রথম ট্যুর দার্জিলিং।
সব প্রসেস করা হয়ে গেছে অলরেডি।
সেখানে আমরা সবুজে সবুজে ভালোবাসা আঁকবো।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার করে বলবো,
“তুমি আমার সঞ্চিত ভালোবাসার স্বর্গপরী।
ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমায়, অনেক বেশি ভালোবাসি।”
আমার এই চিৎকার ধ্বনিত হবে সমস্ত আকাশজুড়ে।
স্বপ্নের মতো সুন্দর হবে আমাদের আগামি।
তাঁকে নিয়ে ভাবছি আর ভাবছি,
যেনো এই ভাবনার শেষ নেই…………….!!
বাসার সামনের রাস্তায় পায়চারী করছি আর এসব ভাবছি।
এই রাস্তাটির একটি অংশ ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে রেল স্টেশনের দিকে চলে গেছে আরেকটি অংশ গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে রোডে।

হঠাৎ একটি কল এলো।
অচেনা নাম্বার।
কল রিসিভ করে যা শুনেছি,
তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

বিয়ের ব্যাপারটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে তার সাথে আমার দুইবার সাক্ষাত হয়েছিলো,
তখন বেশ কয়েকবার জানতে চেয়েছিলাম কারো সাথে তার রিলেশান আছে কিনা!
সাহস দিয়ে বলেছিলাম, “রিলেশান থাকলে বলো,
আমি হেল্প করবো।”
সে তখনো এ বিষয়ে কিছু-ই বলেনি।
আমাকে তার পছন্দ হয়েছে তা জানিয়েছিলো।
আর তখন থেকে-ই তাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন বুনন শুরু।
একবারও বুঝতে পারিনি আমি যাঁকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছি,
সে স্বপ্ন বুনে রেখেছে অন্যকাউকে ঘিরে।
আমার হৃদয়ে যাঁর বাসা,
তাঁর হৃদয়ে অন্যকারো বসবাস।
সে তাঁর প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেলো বিয়ের সমস্ত আয়োজন পন্ড করে দিয়ে।
ব্যর্থ হয়ে গেলো নিষ্পাপ প্রেমের অনবদ্য কাহিনী।
কিছু প্রেম এভাবেই শুরু হওয়ার পূর্বে-ই শেষ হয়ে যায়।
কিছু নিয়তি এমন করে-ই খেলে যায় কিছু মানুষের সাথে।

গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারতো।
কিন্তু ভাগ্য শেষ হতে দিলো না।
অল্পের জন্যে সিএনজির সাথে ধাক্কা খাইনি।
তারমধ্যে সিএনজিটি আবার আমার গাঁ ঘেষে দাঁড়ালো।
কিছু বুঝার আগেই আমাকে সিএনজিতে উঠানো হলো। আমি এখনো পুরোদমে ঘোরের মধ্যে আছি। জীবনের এই প্রথম এমন অমৃত নারী ঘ্রাণ আমাকে আস্বাদন করলো! তার ধাক্কায় আমার ঘোর ভাঙলো। সে ধাক্কা দিয়ে বললো, “এই, ঘুমিয়ে গেছেন নাকি? শুনেন, আমার এমন ফর্মাল টর্মাল বিয়ে পছন্দ নয়। সারাদিন আটা-ময়দা লাগিয়ে বসে থাকা, অসংখ্য মানুষের সাথে ফটোসেশান করা, হেনতেন করা আমার চরম বিরক্ত লাগে। আমার অনেক দিনের শখ পালিয়ে বিয়ে করা৷ আমি কারো জন্য আমার শখ বিসর্জন দিতে পারবো না। তাই চলে এসেছি। আপনাকেই বিয়ে করে পালিয়ে যাবো। আপনার কি এতে কোনো আপত্তি আছে? থাকলেও কিচ্ছু করার নেই। আমি এমনই। এখন থেকে প্রতিদিনই আপনার এমন সব অদ্ভূত ব্যাপার স্যাপার হজম করতে হবে।”

আমি নিষ্পলক তাঁকিয়ে আছি। সে অনর্গল বলেই যাচ্ছে, “এইভাবে ভ্যাবলার মতন তাঁকিয়ে আছেন কেনো? শুনেন, এখনো প্রায় সবাই ঘুমিয়ে আছে। হয়তো এতক্ষণে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে হালকা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই আমাদের বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। সবাই যখন জানবে আমি পালিয়ে গেছি, ততক্ষণে আমরা হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেব। আপাতত কক্সবাজার যাচ্ছি, বাসেরও দুটো টিকেট করে রাখা আছে। পরে আপনার দার্জিলিং টার্জিলিং এ যাওয়া যাবে, ব্যাপার না৷ আমি সবকিছু আগ থেকেই প্ল্যান করে রেখেছি। এই সিএনজিটি আমার বন্ধু আগেই ঠিক করে রেখেছিলো। আমরা আমার এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে উঠবো, ওর মা-বাবা এখন দেশের বাইরে আছেন। ওখানে আমার কয়েকজন বন্ধু থাকবেন কাজী নিয়ে, আপনারও কয়েকজন বন্ধু ওখানে থাকবে। সেটা গেলেই দেখতে পারবেন। আপনাকে বিশ্বাস নেই। তাই আপনার অজান্তেই সবকিছু করা হয়েছে। আপনার ফ্যামিলি নিয়ে চিন্তা করবেন না। উনাদেরকে জানানো হবে আপনি রাগে-ক্ষোভে আপনার এক বন্ধুর বাসায় আছেন। কিরে বাবা, এইভাবে কি দেখছেন? বিয়ের পরেও কিন্তু এমনভাবেই তাঁকিয়ে থাকতে হবে!”

আমি তাঁকিয়েই আছি। এখনো তাঁকিয়ে আছি।

#লেখক
এম, এ, বাকী বিল্লাহ
তরুণ লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x