বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

মানবতাবিরোধী অপরাধ : লাখাইয়ের শফি উদ্দিন রাকজাকারের ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের লাখাইয়ের এক রাজাকারকে ফাঁসি ও তিন রাজাকারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রাজাকার মো. শফি উদ্দিন মাওলানা পলাতক। আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া রাজাকার মো. জাহেদ মিয়া ওরফে জাহিদ মিয়া, মো. সালেক মিয়া ওরফে সায়েক মিয়া ও তাজুল ইসলাম ওরফে ফোকন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। মৃত্যু না হওয়া পর‌্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শফি উদ্দিনের মুত্যু কার‌্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে। আর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগ পর‌্যন্ত তাদের কারাভোগ করতে হবে।

শফি উদ্দিন আত্মসমর্পন করলে অথবা তাকে গ্রেপ্তার করার পর তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার‌্যকর নির্দেশ দিয়ে রায়ে আরও বলা হয়েছে, দণ্ড বা রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে যদি শফি উদ্দিন মাওলাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় অথবা সে যদি আত্মসমর্পন করে তবে বিনা মূল্যে তার কাছে রায়ের অনুলিপি সরবরাহ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের ট্রাইব্যুনাল এই রায় দেন। মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে আসামি সাব্বির আহমেদকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মামলার দুইটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় চার আসমিকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড এবং দ্বিতীয় অভিযোগে শফি উদ্দিন মাওলানাকে মৃত্যুদণ্ড এবং তিন আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

২০১৬ সালের ২২ মার্চ তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পরে তিন আসামি জাহেদ মিয়া ওরফে জাহিদ মিয়া, সালেক মিয়া ওরফে সায়েক মিয়া এবং তাজুল ইসলাম ওরফে ফোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর ২০১৮ সালের ৪ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে যাচাই-বাছাইয়ের পর একই বছরের ৬ অগাস্ট পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল কলে প্রসিকিউশন। এরপর ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে এ মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়ে গত ১৮ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহন শেষ হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৯ জন সাক্ষী। সাক্ষ্য গ্রহন ও মামলার যুক্ততর্ক শেষে গত ১৭ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষায় রাখার পর বৃহস্পতিবার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের পর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর পর‌্যালোচনা করে খালাস এবং আমৃত্যু কারদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার চিন্তা করব।
জাহেদ মিয়াসহ চার আসামি পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘২০১০ সালে সৈয়দ কায়সারের মামলা চলছিল, তখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা হবিগঞ্জ জেলার রাজাকারদের একটি তালিকা তৈরি করেছিল। সে তালিকায় এ আসামিদের নাম, ছির না। পরে ২০১৭ সালের আরেকটি তালিকা তৈরি করে আমার আসামিদের নাম ঢুকানো হয়।
এ আইনজীবী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। আশা করি আপিলে তারা খালাস পাবেন ‘
পলাতক সাব্বির আহমেদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিমের ভাষ্য, ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার মক্কেল ন্যায় বিচার পেয়েছেন।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ২টায় আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানা সহযোগী রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মিদের সঙ্গে নিয়ে লাখাইয়ের মুড়িয়াউক গ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএনএ মোস্তফা আলীর বাড়িসহ আশেপাশের আরও ১০-১২টি বাড়ি অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে এবং গান পাউডার ছিটিয়ে বাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয়।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে আসামি মো. শফি উদ্দিন মাওলানাসহ অন্যান্য রাজাকার ও একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে লাখাইয়ের মুড়িয়াউক গ্রামে যান। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা মো. ইলিয়াস কামালের বাবা মো. ইদ্রিস মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানের বাবা আব্দুল জব্বারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x