মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

শীতে করোনাভাইরাস ও করণীয়

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

নিউজটি শেয়ার করুন

চলে আসছে শীত মৌসুম। অন্যদিকে নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন গোটা বিশ্ব। বর্তমানে কোভিড-১৯ মানেই একটি আতঙ্কের নাম। শীতের সময় যেকোনো ভাইরাসজনিত রোগ বেড়ে যায়। কারণ এসময় মানুষের শরীরে ইমিউনিটি কমে যায়।

গবেষকরা ধারণা করছেন- শীতের সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। বেড়ে যেতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা। গরমের চেয়ে শীত আরামদায়ক হলেও ভোগান্তি পোহাতে হয় বেশ। শীতকালে নানান রকম মৌসুমি ফ্লু দেখা যায়। বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা গুলো বেশি দেখা যায়। গরমকাল শেষ হওয়ার পর থেকে শীতকাল শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কালে আবহাওয়ার অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এসময় শরীর চট করেই খাপ খাওয়াতে পারে না। জ্বর, সর্দিকাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এ নিয়ে ইতোমধ্যে ভোগান্তি দেখা দিতে শুরু করেছে। কারণ করোনাভাইরাস আছে মোট চার রকমের যা সাধারণ- জ্বর, সর্দিকাশির লক্ষণ সৃষ্টি করে। সাধারণ জ্বর হলেও মানুষ করোনাভাইরাস মনে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পরছে।

প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও হাজার পেরিয়েছে। বেড়ে গিয়েছে মৃত্যুহার। বয়স্করা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি, অথবা উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারের মত রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া কিংবা মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি।আবার শীতের সময় বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তার উপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের বাচিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পরবে।
অন্যদিকে শীতের এই করোনা কালে সবথেকে বেশি আক্রান্ত হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্নবিত্তরা। পথেই যাদের বাস, পথে ঘুমিয়ে যারা জীবন অতিবাহিত করছে, যারা তাদের মৌলিক চাহিদা গুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারছে না, শীতের ত্রাণের আশায় যারা পথচেয়ে থাকে, তারা করোনাভাইরাসের সাথে লড়বে কি করে? শীতবস্ত্র নেই, নেই দু’বেলার ঠিকমতো আহার। শীতের সময় এদের মাঝে রোগবালাই এর সংখ্যাও বেশি দেখা দেয়। কষ্টকর হয়ে উঠবে করোনার সাথে লড়ে টিকে থাকা।
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় হাঁচি, কাশি দেওয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। যার ফলে ভাইরাস ছড়ানোর সুযোগ বেশি। ঠাণ্ডার সময় মানুষ ঘরের ভেতরে বেশি থাকে। দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরের পরিবেশ শুষ্ক করে তোলে এবং কাছাকাছি বসবাস করে। যার ফলে করোনাভাইরাস অতি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ধারণা করা হয়, করোনাভাইরাসের একটি বৈশিষ্ট্য হলো ঠাণ্ডায় এটি অনেকদিন ধরে বেচে থাকতে পারে।
শীতকালে যেহেতু যেকোনো ভাইরাস খুব দ্রুত গতিতে সংক্রমণ করে, সেহেতু করোনাভাইরাস মহামারির এ সময় আরো বেশি বেশি শরীরের যত্ন নিতে হবে এবং চলাফেরা করতে হবে সতর্কতার সাথে। কারণ কথায় আছে- চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।
সরকার এই ভাইরাস মোকাবেলা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও এসময় ব্যক্তিগত ভাবে নিরাপদ থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। তার কিছু উপায় হলো- মাস্ক পড়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে, মাস্ক পড়ার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে যেনো শরীরে অন্যান্য ফ্লু গুলো সংক্রমণ করতে না পারে, ঘরে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, কুসুম গরম পানি দিয়ে গসল করতে হবে, ভিটামিন-সি ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে, পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বেশি করে শাকসবজী খেতে হবে, গরমপানি পান করতে হবে (প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ লিটার), সবসময় গরম কাপড় পরিধান করা, দরকার ছাড়া সকল কাজের পরিমাণ কমিয়ে আনা, সবসময় ডাক্তারের পরামর্শে থাকা, মানসিকভাবে সুস্থ থাকা ইত্যাদি।
চীনের উহানে প্রথমে শনাক্ত হওয়া এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় সব দেশ ও অঞ্চলে। ৮ মার্চ, ২০১৯ বাংলাদেশে প্রথম সনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৭৩,৯৯১ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩,৯০,৯৫১ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬,৭৭২। আমাদের চেষ্টা করতে হবে নিজেকে নিরাপদ রাখা এবং নিজেদের দ্বারা যেনো অন্য কেউ সংক্রমিত না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x