শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০০ পূর্বাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যে ভেজাল 

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

নিউজটি শেয়ার করুন

ইসলাম একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনবিধান। যাতে রয়েছে অণুর মত ক্ষুদ্র় এবং বঙ্গোপসাগরের মত বিশাল বিষয়ও। যার কারণে মানুষের জীবনের কোন ক্ষেত্রেও যেন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়। ঠিক তেমনি মানুষ কি ধরনের খাদ্য গ্রহণ করবে এবং খাদ্য অনৈতিকভাবে কোন প্রকার ভেজাল দিলে কি ক্ষতি হবে তা অস্পষ্ট ভাবে ইসলামী শরীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূলত মানুষের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি হয় এমন কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ  খাদ্যের মধ্যে মিশ্রিত করা।খাদ্যে ভেজাল দিলে শুধু মানুষের শরীরের ক্ষতি হয় তা নয়,খাদ্যে ভেজাল দিলে ক্রেতার সাথে প্রতারণাও করা হয়। আর প্রতারণা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে এক খাদ্যস্তুপ এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দেখলেন ভিতরের গুলো ভেজা। তিনি খাদ্য বিক্রেতার নিকট জানতে চাইলে এটি কেমন কথা? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যগুলোকে উপরে রাখনি কেন? যাতে মানুষ দেখতে পেত। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম বলেন,যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে সে আমার উম্মত নয়। (মুসলিম)
খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার ফলে যে অর্থ আসে তাও অবৈধ। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবৈধ পন্থায় অপরের সম্পদ ভক্ষণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না। (সূরা বাকারা)
সম্পদ ভক্ষণের ক্ষেত্রে অন্যতম নীতি হচ্ছে বস্তুটি শুধু হালাল হলেই চলবে না বরং বস্তুটি বৈধ পন্থায় হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তাদের জন্য সকল পব পবিত্র বস্তু হালাল করা হয়েছে এবং সকল অপবিত্র বস্তু  হারাম করা হয়েছে “।(সুরা আরা’ফ)
তাই ভেজাল যুক্ত খাদ্যের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থও অবৈধ ও হারাম। যারা খাদ্যে ভেজাল দেয় তাদের উপার্জিত অর্থ হারাম। আর হারাম ভক্ষণকারীর ইবাদাত দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় চুল ও ধূলি ধূসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে দুই হাত তুলে দোয়া করতে লাগলো, অথচ সে যা খায় তা হারাম, সে যা পরিধান করে তা হারাম, সে পান করে তা হারাম এবং হারাম দ্বারাই পুষ্টি অর্জন করে, তার মুনাজাত কিভাবে কবুল হতে পারে?  (মুসলিম)
খাদ্যে ভেজাল দিলে মূলত বান্দার হক নষ্ট করা হয়।আর  বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে ক্ষমা করে।
একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে উপবিষ্ট সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা কি জানো গরিব কে? সাহাবীরা বললেন, আমাদের মধ্যে তো গরিব তাদেরকেই বলা হয়, যাদের কাছে ধন- সম্পদ টাকা পয়সা থাকে না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রকৃতপক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে গরীব সে যে কিয়ামতের দিন নামাজ,রোজা, যাকাত সবকিছু নিয়ে উঠবে কিন্তু তার এর কর্মগুলো থাকবে যে সে দুনিয়াতে কারো সাথে মন্দ আচরণ করেছে, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি।সেদিন তার সৎ কাজ গুলো দিয়ে অর্জিত নেকিগুলো হকদারের সব পরিশোধ করতে হবে। যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)
পরিশেষে বলা যায় যে,ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া হারাম। আর হারাম উপার্জিত অর্থ অবৈধ। আর অবৈধ সম্পদ দ্বারা শরীর গঠন করলে সে শরীর কখনো জান্নাতে যাবে না।
লেখকঃ শিক্ষার্থী, 
আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 
এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x