শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

সেক্যুলারিজমঃ ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ধর্মহীনতার দ্বন্দ্ব

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশের কিছু মানুষের ধারণা সেক্যুলারিজম বা ইহলৌকিকতা অর্থ হলো ধর্মহীনতা। বাংলাদেশে এর পক্ষে বা বিপক্ষে যারা, তারা সবাই এর অর্থ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি ব্যবহার করেন। স্বাধীনতার পর পরই সেক্যুলার মানে যে ধর্মহীনতা নয় এরুপ ব্যাখা সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে।

শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন,

“ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে; মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে; খ্রিস্টান, বৌদ্ধ- যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না। রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে বাংলার মানুষ যে তাকে প্রত্যাহার করবে, এ আমি বিশ্বাস করি।“ (বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পৃ. ৩২)

কুরআনের বর্ণনা, মহানবী স. – এর দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায় ইনসাফ ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের কাজ; এ কাজকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন। ইবনে কাইয়্যিম’র কথা থেকে এটা স্পষ্ট, যে নামেই ন্যায়-বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার কাজ করা হোক না কেনো সেটা ইসলামি কাজ।

বিশ্বায়নের এ যুগে আরেকটি কথা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা মুসলমানরা যারা ইউরোপ-আমেরিকা বা ভারতবর্ষের মতো দেশে বাস করছি তারা সে সব দেশে সংখ্যালঘু। ধর্ম বা এথনিক বিচারে সংখ্যালঘুদের রক্ষাকবচ হচ্ছে সেক্যুলারিজম। চীন, মায়ানমার বা ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এর দায় সেক্যুলারিজমের নয়। সে সব দেশের সরকার ধর্মবিদ্বেষী বা মুসলিম বিদ্বেষী যা সেক্যুলারিজমের পরিপন্থি। একজন মুসলমান ভারতে বা ব্রিটেনে বাস করে সেক্যুলারিজমের পক্ষে লড়াই করবে এবং বাংলাদেশে বাস করে আমি, আপনি সেক্যুলারিজমকে নাস্তিকতা বলবো, সেটা হবে পরস্পর বিরোধী বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কথা। একুশ শতকের পৃথিবী একটি গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বায়নের বাস্তবতা আমাদের উপলদ্ধি করতে হবে। ইসলাম লুকোচুরি পছন্দ করে না। বিশ্বের সর্বত্র আমাদের এক নীতি অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে মুসলমানরা ধোঁকাবাজ হিসেবে পরিচিত হবে।

সেক্যুলারিজম প্রাকৃ্তিক বিজ্ঞান নয় যে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এর সংঙ্গা নির্ধারণ করতে হবে। এটা সমাজ বা রাজনীতি বিজ্ঞানের বিষয়। ব্রিটেন, কানাডা বা নিউজিল্যান্ড নিজস্ব বোধ এবং প্রয়োজনমতো সেক্যুলারিজমকে সংঙ্গায়িত করছে। সেক্যুলারিজমের বিধিবদ্ধ ও সুনির্দিষ্ট সংঙ্গা না থাকায় এবং যেহেতু এটা প্রাকৃ্তিক বিজ্ঞানের বিষয় নয় বরং সমাজ বা রাজনীতি বিজ্ঞানের বিষয়, সেহেতু আমাদের নিজেদের মতো করে সেক্যুলারিজমের সংঙ্গা ও ব্যাখা দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

কেউ চাইলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি না করে মানুষের মঙ্গলের জন্যে মানুষের অধিকার আদায়ের রাজনীতি, ন্যায়-বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতে পারে। কারো কথায় ইসলাম না থাকলেও তিনি যে কাজ করতে চান সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হলে সে-কাজে সহায়তা করা একজন সচেতন মুসলমানের জন্যে অত্যাবশ্যকীয়। নবি ইউসুফ আ. দায়িত্ব নিয়ে দুর্ভিক্ষ থেকে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের জনগণকে রক্ষা করেছেন; এবং মহানবি স. জালিমদের হাত থেকে মজলুমদের রক্ষা করার জন্যে ‘হিলফুল ফুজুলে’ অংশগ্রহণ করেছেন।

রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে ধার্মিক, নাস্তিক, সংশয়বাদী বা সেক্যুলার হতে পারেন। ধার্মিক হলে তিনি নামাজ পড়বেন বা উপাসনা করবেন। কিন্তু রাষ্ট্র নামাজ বা উপাসনা কোনোটাই করে না। কিন্তু রাষ্ট্র এর নাগরিকদের নামাজ বা উপাসনা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে সহযোগিতা প্রদান করবে। ব্রিটেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও তুরস্কের সরকার যেভাবে করছে; আমাদের সাব-কন্টিনেন্টের রাষ্ট্রগুলো কি সেভাবে প্রদান করছে?

মোঃ আব্দুর রহমান
শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x