শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

নিথর দেহে ফেনীতে ফিরলেন মুকুটহীন সম্রাট হাজারী

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৪৭

নিউজটি শেয়ার করুন

জীবনের পড়ন্ত বেলায় আলোচিত-সমালোচিত গডফাদার খ্যাত জয়নাল হাজারী ফেনীতে বারবার ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে গেছেন। সবই চলে গিয়েছিল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফেনীতে যুগে যুগে একেকজন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। ফেনীর ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তিরা দেশজুড়ে ‘গডফাদার’ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। আর এসব গডফাদারের মধ্যে জয়নাল হাজারীই ছিলেন সবচেয়ে আলোচিত। সেই অধ্যায়ের অবসান হলো সোমবার সন্ধ্যায়। চিরতরে না ফেরার দেশে গেলেন মুকুটহীন এই সম্রাট।

বলা হয়ে থাকে, ফেনীর প্রথম গডফাদার ছিলেন জয়নাল হাজারী। আর তার বানানো দলটির নাম ছিল ‘স্টিয়ারিং কমিটি’। কমিটির কাছে ফেনীবাসী ছিল জিম্মি। পরে অবশ্য সেই ক্ষমতা চলে গেছে অন্যের দখলে।

একসময় জয়নাল হাজারী ফেনীতে রামরাজত্ব কায়েম করে তার অনুসারিদের বলেছিলেন, ‘আমি করবো আওয়ামী লীগ আর তোরা করবি হাজারী লীগ।’

চলতি বছরের আগস্টে দুইবার তিনি ফেনীর মাটিতে পা রেখেছিলেন। তবে অসহায়ের মতো। ঈদুল আযহা ও ১৫ আগস্টে কোনো লোকসমাগম করতে পারেননি। নিজাম হাজারীর অনুসারীরাই তা করতে দেয়নি। জয়নাল হাজারীর গুটিকয়েক অনুসারী এখন নিজাম হাজারীর অনুসারীদের চাপের মুখে থাকে।

মৃত্যুর সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন জয়নাল হাজারী। তিনি ফেনী-২ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক ছিলেন।

যেভাবে হাজারী অধ্যায়ের পতন

১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় ফেনীতে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রায় ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী মারা যান। এরপর থেকে মারাত্মক সমালোচনার শিকার হতে থাকেন জয়নাল হাজারী।

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৬ আগস্ট রাতে যৌথ বাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তিনি তখন আত্মগোপন করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তার কর্মীরাও ছন্নছাড়া হয়ে যায়। তার সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙে খান খান হয়ে যায়। আর এর পেছনে মূল নায়ক ছিলেন ডিসি সোলায়মান চৌধুরী।

জয়নাল হাজারীর সাম্রাজ্য তছনছ করে ডিসি সোলায়মান রাতারাতি দেশের আলোচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। শেষ হতে থাকে জয়নাল যুগের।

২০০৪ সালে হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার। তবে একে একে সব মামলা থেকেই অব্যাহতি পান তিনি। ২০১০ সাল থেকে ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এই নেতা। মূলত ১৯৯৬ সালের পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন হাজারী। ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান তিনি। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন হাজারী। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্কৃয় ছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলেও এক পর্যায়ে প্রার্থিতা বাতিল হয় তার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ফেনীর তিনটি আসনের জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন তিনি। কিন্তু মনোনয়ন পাননি একটিতেও।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন অবিবাহিত। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিয়ে করেননি বলে নিজেই স্বীকার করতেন ফেনীর সম্রাট।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x