বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৫ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আনোয়ার হোসেন রানার চার শ্যালিকা গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এই অভিযোগ করেন।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানা অংশীদারদের ঠকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞাত আয়বর্হিভূত কোটি কোটি টাকা সম্পদ অর্জন করেছেন।

অভিযোগে তার চার শ্যালিকা উল্লেখ্য করেন, আমাদের বাবা মরহুম আলহাজ্ব সেখ সরিফ উদ্দিন উত্তরবঙ্গে প্রতিষ্ঠিত ‘সরিফ বিড়ি’সহ একাধিক ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠান তার নিজের হাতে গড়ে তোলেন। ১৯৮৬ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের মা দেলওয়ারা বেগম পিতৃহারা পাঁচ বোনকে নিয়ে ব্যবসার হাল ধরেন এবং তা ধীরে ধীরে আরও সম্প্রসারিত করেন। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে সবার বড় বোন আকিলা শরিফা সুলতানা খানমের স্বামী আলহাজ্ব সাইফুল ইসলাম ২০০৬ সালে মারা যান। ওই সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের ১৫শত টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন আনোয়ার হোসেন রানা। বড় বোনের স্বামী সাইফুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর কর্মচারী আনোয়ার হোসেন রানা বিধবা আকিলা শরিফা সুলতানা খানমকে ২০০৯ সালে ভুল বুঝিয়ে পালিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। উল্লেখ্য, আনোয়ার হোসনে রানার পূর্বের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।

দেড় হাজার টাকা বেতনের এই কর্মচারী রানা আমাদের বোনকে বিয়ের পর আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে শুরু করে। আমাদের বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের দিকে তার শকুনের চোখ পড়ে। এবং আমাদের বয়স্ক বিধবা মা’র সরলতার ও অক্ষরজ্ঞানহীনতার সুযোগ নিয়ে এক প্রকার অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সম্পত্তিসমূহ অংশীদার অর্থাৎ আমাদের ঠকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে দলিল করে নেয়। এক্ষেত্রে আমাদের বড় বোন অর্থাৎ তার স্ত্রী তাকে সহযোগিতা করে।

আনোয়ার হোসেন রানা বিরুদ্ধে তার শ্বশুরের বগুড়ার শাকপালা মৌজার ২০ শতাংশ জমি, সূত্রাপুর মৌজার ৯৮ শতক জমি এবং ঢাকার মোহাম্মপুরের ১৪০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেয়। এছাড়াও আমাদের মা দেলওয়ারা বেগমের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে সংরক্ষিত এফডিআর ও গচ্ছিত প্রায় শত কোটি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেয়। আর এসব ঘটনা অভিযোগ আকারে বগুড়া সদর থানায় দেওয়ার পর পুলিশ তদন্ত করে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর ওই অভিযোগ আনোয়ার হোসেন রানা ও তার স্ত্রী গ্রেফতার হন। সেই মামলায় বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।

বগুড়ার নন্দীগ্রামের কলেজপাড়াসহ আশপাশে নামে-বে নামে তার প্রচুর জমি, সেখানে অত্যধুনিক বাড়ি করেছেন। বর্তমানে সেসব সম্পদের দাম কয়েক কোটি টাকার উপরে। যা আমাদের বোনকে ২০০৯ সালে বিয়ে করার আগে কখনোই ছিল না। মাত্র পাঁচ বছর আগে আনোয়ার হোসেন রানা ওরফে ক্যালা জীবন চলার ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মত তেমন কিছুই ছিল না। সম্পদের বিশালতার পরিচয় দিতে কোটি টাকা দামের একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার শুরু করে। গাড়ির নম্বর: ১. ঢাকামেট্রো-ঘ-১৩-৯১৪৩, হোন্ডা সিআরভি জীপ ২. হেভেল-৯ হার্ড জীপ ৩. সুজুকি ক্যালটাস কার ৪. রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিভিন্ন গাড়ি।

শহরের শাকপালায় নামে বেনামে দুইটি (এসআর প্রিন্টিং প্রেস এবং শরীফা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন) অত্যাধিক স্বয়ংক্রিয় প্রিন্টিং প্রেস গড়েছে, সেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। প্রেসগুলোতে বিড়িতে ব্যবহারের জন্য অবৈধভাবে ব্যান্ডরোল ছাপাতে এবং তা আমাদের প্রতিষ্ঠিত সরিফ বিড়িতে ব্যবহার করে সরকারকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করেছে। একাধিক ব্যাংকে বিশেষ করে আইএফসি, মার্কেন্টাইল, প্রিমিয়ার, ইসলামী ব্যাংক, এসআইবিএল, ইউসিবিএল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে/লেনদেন হয়েছে।

সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে গড়া এসব সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা অংশ হিসাবে বেশিকিছু গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। তার এবং তার লোকজনের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।

উল্লেখ্য, শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা জামিনে রয়েছেন। গত বছর শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বগুড়াসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আনোয়ার হোসেনকে বার বার ফোন করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x