শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

সরস্বতী পূজো নিয়ে কি ভাবছেন শিক্ষার্থীরা

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

বাণী শব্দের অর্থ, মহত্বপূর্ণ উক্তি বা কল্যাণকারী বাক্যসমূহ। অর্চনা বলতে বুঝায় পূজা, বন্দনা, উপাসনা, আরাধনা ইত্যাদি। জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী, বিভিন্ন নামে, যথা, বাগদেবী, বীনাপানি, সারদা এবং অন্যান্য নামে অভিহিতা তিনি। সরস্বতী দেবীর আর্শীবাদ প্রাপ্ত হয়ে আমরা জীবনের প্রকৃত জ্ঞান সহ জাগতিক সকল জ্ঞান আস্বাদন করে থাকি। দেবীর প্রার্থনা করে সকলেই চায় তাদের সদ্বুদ্ধি উদয় হোক এবং মন থেকে সকল কুচিন্তা দূর হয়ে শুভ্র চিন্তার বাতায়ন অব্যাহত থাকুক। সরস্বতী পূজো নিয়ে বহু আলোচিত ঘটনা রয়েছে তারই মধ্যে লোকমুখে আমরা প্রায়শ এই কথা শুনে থাকি যে সৈয়দ মুজতবা আলী এক প্রবীণ লোকের অনুরোধে একবার সরস্বতী পূজা দিয়েছিলেন। প্রবীণ লোকটি আলী সাহেবকে অত্যন্ত অনুনয় করে বললেন, “বাবা, আমার বাড়ির পুজোটা করে দাও, পুরোহিত এখনও আসেনি। আমি পুরোহিত খুঁজতে বেরিয়েছি. বাচ্চাটা না খেয়ে অঞ্জলি দেবে বলে বসে আছে।

অবশেষে বৃদ্ধার অনুরোধ এবং বিশেষ করে বাচ্চা মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হলেন আলী সাহেব। বৃদ্ধার বাড়িতে বিশুদ্ধ সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণে, পুজা-পদ্ধতি মেনে আলী সাহেব সরস্বতী পুজো করলেন।

বাঙালির হৃদয়ে সরস্বতী পূজা এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রৌঢ় থেকে নবীন সকল বয়সের মানুষের প্রাণে এক অবিচল আনন্দে উদ্দেলিত থাকে। সে প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় এক কঠোর প্রতিযোগিতার হুল্লোড় শুরু করে দেয়।বাঙালির হৃদয়ের এই চেতনা যা পশ্চিমা দেশের প্রতাপকেও হার মানিয়ে ফেলে, হৃদয়ের অন্তঃস্থে দাগ কেটে রাখে।

এই সরস্বতী পূজোর শুভক্ষণেকয়েকজনের অভিজ্ঞতা ও উচ্ছ্বাস জানাচ্ছেন শ্রেয়সী সিকদার।

সরস্বতী পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি চেতনার নাম। মা সরস্বতী বিদ্যার দেবী, আর তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই পূজা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উদযাপন করা হয়ে থাকে। ছোট থেকেই সরস্বতী পূজার দিন খুব সকালে উঠে স্নান করে বই নিয়ে রওনা দিতাম পূজা মণ্ডপে। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি যেন বছরের শুরুতে পাওয়া কঠিন বইগুলোর পড়া সহজ হয়ে যায়। এটা অন্যরকম এক ভালোলাগার অনুভূতি আমার কাছে। সরস্বতী পূজার দ্বিতীয় আকর্ষণ হলো অঞ্জলি শেষ করে বছরের প্রথম বড়ই বা কূল খাওয়া। কারণ পূজার আগে খাওয়া বারণ যে, তাই অপেক্ষাই থাকি পূজা শেষ হলেই কূল খাওয়া হবে। সর্বোপরি সরস্বতী মায়ের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের বিদ্যা-বুদ্ধি ও জ্ঞান দান করেন। তাছাড়া নানারকম আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়ে থাকে, পাশাপাশি সকলে মিলেমিশে সানন্দে উৎসবে অংশ নিয়ে থাকি। মহামারি কেটে যাক,সকলে সুস্থ স্বাভাবিক পদার্পণ করুক। সবাইকে সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা রইল।

জয়া সরকার
শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
১৫তম আবর্তন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শৈশবে সরস্বতী পুজো মানেই বই পুস্তক মার চরণে সপে বেশ কয়েকদিনের ছুটি। আমাদের বাড়ির উঠোনেই সরস্বতী পুজো আয়োজন হতো বড় পরিসরে। পুজোর দিনটা শুরু হতো গায়ে কাচা হলুদ ও নিমপাতা বাটা মেখে। সকালে স্নান শেষে সকলে নতুন জামা কাপড় পরে মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করতাম,পুজো শেষে ভাই বোনরা মিলে গ্রামের সকলের মাঝে প্রসাদ বিতরন করতাম। শৈশবের পুজাগুলো বেশ আনন্দেই কাটতো! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুজোর অভিজ্ঞতা বলতে গেলে প্রথম বর্ষে খানিকটা অবাক হয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এতো বড় পরিসরে সরস্বতী পুজোর আয়োজন দেখে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি যেনো চোখের সামনে স্পষ্ট অনুভব করতে পেরেছিলাম তখন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজো আয়োজনের স্মৃতি গুলো এখনো অমলিন। প্রতিটা বিভাগ থেকে ভিন্ন ভিন্ন থিমের আদলে মণ্ডপ গুলোকে সাজানো হতো। প্রতিবারই পুজোর দিন গুলোতে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব বন্ধু বান্ধব মিলে সারারাত হৈ-হুল্লোড় করে পুজোর মণ্ডপ সাজাতাম। বিশেষ করে পুজোর আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হতো পুজোর আসল আমেজ। একদিকে মেয়েরা দল বেধে থাকতো ক্যাম্পাসে আল্পনা আকাঁ নিয়ে অন্যদিকে আমরা ছেলেরা কেউ ব্যস্ত থাকতাম সদর ঘাট থেকে প্রতিমা আনায় তো কেউ মন্ডপ সজ্জায়। ছোট ছোট গানের আসরের গান, আড্ডা আর সুরে মুখোরিত হতো পুরো ক্যাম্পাস। সরস্বতী পুজো যেনো হয়ে উঠতো প্রাক্তন ও নবীন ছাত্র ছাত্রীদের মিলন মেলার উপলক্ষ। তারপর পুজো শেষে প্রসাদ বিতরন হতো সকল বিদ্যার্থীদের মাঝে। পুজোর দিন সন্ধায় ক্যাম্পাসে নামতো হাজার মানুষের ঢল। চারুকলা, নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগ থেকে আয়োজন করতো নানা করমের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। তারপর রাতে ধুনুচি হাতে নেচে গেয়ে নৌকা করে দল বেধে প্রতিমা বিসর্জন দিতাম বুড়িগঙ্গা নদীতে। আজ বিদেশের মাটিতে বসে প্রায়ই ফেসবুকের মেমোরি গুলো স্ক্রল করে সেই ফেলে আসা স্মৃতি গুলো রোমন্থন করে যাই। বছর ঘুরে বছর আসে সেই আনন্দঘন দিন গুলো আর আসে না।

হিমেল দে
পিএইচডি শিক্ষার্থী
দি ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা, যুক্তরাষ্ট্র

 

সরস্বতী পূজা মানে একটা দিনই মায়ের হাত থেকে নিজের মতো চলার স্বাধীনতা।পড়াশুনা থেকে মুক্তি ও বটে। স্কুলে যাচ্ছি ওই দিন কিন্তু নিজের মতো সেজেগুজে। আহা কি দিন একটা যে কাটিয়েছি স্কুল কলেজে। পূজার দিনটা স্পেশাল। পড়নে হালকা রঙের শাড়ি, চুড়ি, খোলা চুল, টিপ ব্যাপারটাই অন্যরকম। পূজোতে স্কুল কলেজে সকাল সকাল গিয়ে মন্ডপের প্রসাদ সাজানো থেকে শুরু করে সব।সবথেকে ভাল্লাগে ভোগের খিচুড়ি খেতে। সবসময় আমি মানতাম বা এখনো মেনে চলি সরস্বতী মায়ের পূজার আগে কুল বরই কিছুই খাওয়া যাবে না।এখনো তাই ই মেনে চলি। বেশ ভালোই লাগে মেনে চলতে এই ব্যাপারটা। বেশ টানটান উত্তেজনা কাজ করতো আগের রাতে যে কেমন সাজব কেমন শাড়ি পড়ব। সরস্বতী পূজা সকলের মাঝে নানারকম আবেগ নিয়ে আসে, সকলকে জানিয়ে দেয় বসন্তের আগমনের কথা। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে একাত্ম হয়ে পূজায় অংশ নেয়।

উপমা হালদার কথা
ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ
১৬তম আবর্তন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x