পানির আরেক নাম জীবন। তবে শুধুই পানি নয়, সেটা হতে হবে বিশুদ্ধ পানি। এই পানি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছরই আজকের এই দিনে সারা বিশ্বে পালিত হয় দিবসটি। পানি ছাড়া যেমন আমাদের জীবন অচল; তেমনি জলবায়ু ও প্রকৃতি- যা আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তার স্বাভাবিক প্রবাহের জন্যও বিশুদ্ধ পানি অপরিহার্য।
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলের ২০ শতাংশ নারী লবণাক্ততার কারণে অকালগর্ভপাতের শিকার হন এবং ৩ শতাংশ শিশু মারা যায়। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে বিশ্ব পানি দিবসের গুরুত্ব অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশি।
এ সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ইতোমধ্যে এগিয়ে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ‘প্রবাহ’ স্থানীয়দের পানির সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিরাপদ পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করে চলেছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিগত ১২ বছরের এই যাত্রায় ‘প্রবাহ’ দেশের ২১টি জেলায় এখন পর্যন্ত ১১১টি পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে, যা প্রতিদিন ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার মানুষের নিত্যদিনের পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, দেশের লবণাক্ততাপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে সাতক্ষীরায় নিরাপদ খাবার পানির তীব্র সংকট এখনো বিদ্যমান। সেদিকে গুরুত্বারোপ করেই অগ্রযাত্রার ১৩তম বছরে উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ খাবার পানির নিশ্চিতকরণে সরকারী উদ্যোগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে ‘প্রবাহ’।
প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন আর্সেনিকপ্রবন অঞ্চলসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে, সবুজ নগরী রাজশাহীতে এবং পাহাড়ি অঞ্চল বান্দরবনে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছে ‘প্রবাহ’। মেহেরপুর জেলার আমঝুপি গ্রামের প্রায় ৯০ ঊর্দ্ধ বৃদ্ধা ইস্তাফুন্নেসা বলেন, ‘২০১১ সালে আমাদের এলাকায় এই নিরাপদ খাবার পানির প্রকল্পটি তৈরি হওয়ার পূর্বে আমাদের এলাকায় আর্সেনিক মুক্ত খাবার পানি ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন ছিল। নিরাপদ খাবার পানির উৎস ছিল সীমিত। বিকল্প পানির উৎস (বৃষ্টির পানি, পুকুরের পানি) হতে পানি সংগ্রহ করতে হতো অথবা আমার বাড়ি হতে দুই কিলোমিটার দূরে আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো। বর্তমানে “প্রবাহ” হতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ব্যবহার করার কারণে বিভিন্ন রোগ বালাই হতে রেহাই পাচ্ছি।‘
সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় ২০১৫ সালে ‘এশিয়া রেস্পন্সিবল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারেও ভূষিত হয় এই প্রকল্পটি। বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে, ‘প্রবাহ’ বরাবরই সরকারের সাথে যৌথভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।