শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে শাহবাগে সর্বজনিন সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

৩শ টাকা মুজুরির দাবিতে চা শ্রমিকরা যে আন্দোলন করে আসছে সে আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে সর্বজনিন সমাবেশ করে বিশিষ্ট নাগরিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশের বক্তারা বলেন, চা বাগানের প্রকৃত মালিক সরকার। সরকারের কাছ থেকে মালিকরা লিস নেয় ৩৫ বছরের জন্য। কিন্তু তারা সব সময় নিজেদের লাভের জন্য যে হিসাব দেখান সে হিসাবের মধ্যে অনেক মিথ্যাচারীতা আছে। তারা বলে অতিরিক্ত খরচ লাগে চা শ্রমিকদের জন্য। কিন্তু আমরা হিসাব করে দেখেছি বাংলাদেশের মুজুরি কমিশনে সকল শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের মুজুরি দিতে হয়। এটা শ্রমিকদের প্রাপ্য। কোন অতিরিক্ত খরচ নয়। এভাবে চা মালিকরা চা শ্রমিকদের সাথে প্রতারনা করছে।

বক্তারা আরো বলেন, এই প্রতারনার বিরুদ্ধে চা শ্রমিকরা দাড়িয়েছে। তারা ১৯দিন যাবৎ আন্দোলন করছেন এবং তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যতদিন পর্যন্ত ৩০০ টাকা মুজুরি ঘোষণা করা না হবে ততদিন পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আজকে সরকার মালিকদের সাথে বসেছে। কিন্তু বসা উচিত ছিল চা শ্রমিকদের সাথে। কারণ মজুরি বৃদ্ধির দাবি চা শ্রমিকদের। চা মালিকদের নয়।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করে বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র নামে একটি আইন তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু এই জমিদারি প্রথা অন্য কোথাও না থাকলেও চা-বাগানের ঠিকই রয়ে গেছে। স্বাধীনতার পরে চা শ্রমিকদের যে অবস্থান হওয়ার কথা ছিল তাদের জন্য যে আইন তৈরি হওয়ার কথা ছিল সে আইন এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। তারা এখনো শ্রম দাস হয়ে রয়েছে। কেন ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে চা শ্রমিকরা তাদের মালিকানা বুঝে পেলো না। আজকে যে আলাদা ফসলি জমি রয়েছে সে জমির উপর তাদের মালিকানা থাকতো তবে তো মজুরির জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা লাগত না। এ পরিস্থিতি থেকে তো আমাদের অনেক আগেই বেরিয়ে আসার কথা ছিল। কেনো আমরা এখনো বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের যে প্রাপ্য তা আমরা আদায় করতে পারলাম না। এ ব্যর্থতা আমাদেরকেও নিতে হবে।’

৩০০ টাকা মজুরি না করা হলেমআন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে নারীনেত্রী ফরিদা আক্তার বলেন, ‘যে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তারা কিভাবে চলছে এ নিয়ে কি আমরা চিন্তা- ভাবনা করছি। আজকে সকালে আমি ফেসবুকে দেখলাম একজন আন্দোলন করতে গিয়ে মারা গেছে। আজকে চা শ্রমিকদের যে বেতন তা পৃথিবীতে সর্বনিম্ন বেতন। এটা সবচেয়ে বড় লজ্জার বিষয় আমরা আমাদের চা শ্রমিকদের যে বেতন দেই তা পাশের দেশ আসামের চা বাগানের শ্রমিকদের চাইতেও সবচেয়ে কম মুজুরি। আমরা দেখলাম চা মালিকরা দয়া করে ২০ টাকা মজুরি বাড়ালেন এবং প্রধানমন্ত্রী দয়া করে ৫ টাকা মুজুরি বাড়ালেন। কিন্তু আমরা স্পষ্ট বলতে চাই চা শ্রমিকদের মজুরি কোনো দয়া নয় এটা তাদের প্রাপ্য। চা শ্রমিকদের প্রতি এত অন্যায় আমরা কোনমতেই সহ্য করব না।’

বাংলাদেশ জিডিপি বেড়েছে মাথাপিছু আয় বেড়েছে কিন্তু চা শ্রমিকদের মুজুরি কেনো বাড়ে নেই এ প্রশ্ন তুলে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘মালিকরা ৩০০ টাকা মুজুরি না করার যে যুক্তি দিচ্ছেন তা পুরোপুরি অযোক্তিক। যা সত্যি অবিশ্বাস্যকর। চা শ্রমিকদের উপর সব সময় নির্যাতন করে আসছেন চা মালিকরা। তারা উৎপাদন খরচ বাড়ায়। নিজেদের জীবন – যাত্রার ব্যয় বাড়ায় কিন্তু শ্রমিকদের ন্যায্য মূল্য দিতে চায় না। এবার চা শ্রমিকরা মালিকদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের বাইরে যারা তারাও তাদের সাথে একত্রিত হয়েছেন। যা খুবই প্রয়োজনীয়। আজকে একটা ঘোষণা আসবে। কিন্তু যে ঘোষণাই আসুক আমি বিশ্বাস করি চা শ্রমিকরা ৩০০ টাকা না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন থেকে সরে যাবে না।’

সংহতি সমাবেশ গান, কবিতা ও নাটকের মধ্য দিয়ে সংহতি জানান বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x