বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মানুষ সীমাহীন সংকটে আছে। সরকারের আন্তরিকতা সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনার কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে। কি হচ্ছে, সেটা নিয়েও অন্ধকারে আছে। জবাবে বিদ্যুৎ, জ¦ালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ চলতি মাসেই সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদে সম্পুরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এরআগে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ খাতে ৩২ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার টাকা সম্পূরক বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেন প্রতিমন্ত্রী। ওই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে আনা ছাটাই প্রস্তারে ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বর্তমান বিদ্যুতের নাজুক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন।
এই আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম কবিতারা লাইন উল্লেখ করে বলেন, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ¦ালায় মোমের বাতি, আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশিথে প্রদীপ ভাতি’। অসময়ে আমরা ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ফেলেছি, অথচ আমাদের লাগে ১৪ হাজার মেগাওয়াড, বাকিটা নষ্ট হয়েছে। আজকে উৎপাদন হচ্ছে, মাত্র ৭ হাজার মেগাওয়াট। ফলে সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শিল্পায়ন কমে যাবে, কৃষি উৎপাদনে ধ্বস নামবে। এক সময়র বিদ্যুৎ ছিল, দেশের প্রত্যেকটা গ্রামেগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল। কিন্তু এই গরমে হঠাৎ করে কেন বিদ্যুৎ চলে গেল। এ জন্য আগে থেকেই কয়লা ও ডিজেল আমদানী করা উচিৎ ছিল। তিনি বলেন, আমি মনে করি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নিজেদের মধ্যে সমম্বয় নেই। যার ফলে এই অবস্থা। অতিদ্রুত আমাদের কয়লা আমদানী করতে হতে হবে। যাতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো দ্রুত চালু করা যায়।
সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সচিবালয়ে দেখা গেছে সচিবদের বার্থরুমের মধ্যেও এসি আছে। সেখানে সেন্ট্রাল এসি চালিয়ে রেখেছেন। তাদের এসি হাই ভোল্টেজে চলে।া একবার চললে বন্ধ হয় না। অথচ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। শহরের কিছু ধনীক শ্রেনীর মানুষের জন্য কেন গ্রামের মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারবেন না, তা মানা যায় না। তিনি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানান।
জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বেশীদিন আগের কথা না, মাত্র ১৪ বছর আগেও প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশ অন্ধকারে ছিল। আগে ১৭-১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেখানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছি। আমরা সঞ্চালয় লাইন করেছি। এক হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। যখন আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলি, তখন প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার খরচের বিষয় ছিল। তার ওপর সঞ্চালন লাইন, ডিস্টিবিউশন লাইন ও জ¦ালানী খরচও দিতে হয়। আমাদের প্রস্তুতি আছে ২০ থেকে ২২ হাজার মেগাওয়াটের। যেকোন মুহুর্তে উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু কোভিড পরবর্তিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মত চ্যালেঞ্জ এসেছে, সারা বিশ্বে জ্বালানীখাতে সব জিনিষপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। গ্যাস ও তেলের দামও অস্বাভাবিক। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বৈশি^ক অবস্থার কারণে আমরা সময়মত কয়লা আনতে পারেনি। তবে ১৫-১৬ দিনের মধ্যে আসবে কয়লা এসে যাবে। আবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। সকল সংকট কেটে যাবে।