বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচিতদের শপথের বৈধতা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

নিউজটি শেয়ার করুন

দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভটু আপিালের শুনানি করতে চার বছর পর হঠাৎ উদ্যোগী বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা আবেদনটির শুনানি করতে গত সপ্তাহে চেম্বার আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন। রবিবার সেটি কার‌্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের মৌখিক সময় আবেদনে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত শুনানি একদিন পিছিয়ে দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন, যিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। রাষ্ট্রিপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আইনজীবী এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, “২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করেছিলেন। সে রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছর ২০ আগস্ট লিভটু আপিল করা হয়। গত সপ্তাহে সেটি শুনানির জন্য কার‌্যতালিকায় আনতে স্লিপ দিয়েছিলম। আজ সেটি কার‌্যতালিকায় ছিল। শুনানি শুরুর আগেই রাষ্ট্রপক্ষ সময় চাইলে আদালত সোমবার শুনানির জন্য রাখেন।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ৯ জানুয়ারি শপথ নিয়েছিলেন। বিএনপিবিহীন ওই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি। সে অনুযায়ী দশম সংসদের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

মেয়াদ অবসানের ৯০ দিন আগে থেকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বিজয়ীরা ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। এরপর ৭ জানুয়ারি নতুন সরকারও শপথ নেয়।

তার একদিন পর ৮ জানুয়ারি নতুন এমপিদের শপথ বাতিল করে গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে উকিল নোটিস দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। তার আইনজীবী হিসেবে এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।

ওই নোটিসের জবাব না পাওয়ায় নতুন সাংসদদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি এই রিট আবেদন করেন তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। এমপিদের শপথ বাতিল করে এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে হাইকোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয় সেখানে।

রিট আবেদনে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।

সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রতি সংসদ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে পূর্বের সংসদ সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত এরা দায়িত্ব পালন করবেন। সে অনুযায়ী নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ৩ জানুয়ারি নেওয়া শপথে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। সংবিধানের ১৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শপথের জন্য নির্বাচিতদের উচিৎ ছিল ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪৮(৩) বলা হয়েছে, এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথ গ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।

আর ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।

রিট আবেদনে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেওয়া কেবল বেআইনিই হয়নি, বেআইনিভাবে তারা তাদের পদের মেয়াদও বাড়িয়ে নিয়েছেন। সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি। তাই শপথ নেওয়া নির্বাচিতরা শুধু আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাননি, তারা তাদের সংসদ সদস্য পদটিকেও অকার্যকর করে ফেলেছেন।

প্রথমে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিটইটর প্রাথমিক শুনানির পর আদেশের জন্য রাখেন। কিন্তু আদেশের দিন আবেদনকারী পক্ষ রিট প্রত্যাহার করে নিতে চাইলে আদালত রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন। পরে হাইকোর্টের আরেক বেঞ্চে রিটটির শুনানি হয়। ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x