২০২৪ সালকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি বছর হিসেবে ধরা হয়েছে। এ সময় অর্থনৈতিকভাবে কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব আরও কমতে থাকবে। এর ধারাবাহিকতায় এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভোক্তারা নিত্যপণ্যের বাইরে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ভ্রমণ ও বিনোদনের মতো বিষয়ে মোটামুটি হাত খুলে খরচ করতে পারবেন। মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের (এমইআই) সাম্প্রতিক প্রকাশিত বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ১৩টি দেশের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের আলোকে ‘ইকোনমিক আউটলুক: ব্যালেন্সিং প্রাইসেস অ্যান্ড প্রায়োরিটিজ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে মাস্টারকার্ড। প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে মাস্টারকার্ডের সমন্বিত ও অজ্ঞাতনামা বিক্রয় কার্যক্রম এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল।
প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ কিছু বিষয় ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ইকোনমিক আউটলুক: ব্যালেন্সিং প্রাইসেস অ্যান্ড প্রায়োরিটিজ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের মতোই আগামী বছরও সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। যদিও সব জায়গার পরিস্থিতি একই রকম নয়, তবু মোটাদাগে এর কারণ হিসেবে বলা যায়, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে এবং রপ্তানি ও পর্যটনের মতো প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তিগুলো মহামারি পূর্ব পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা দিনদিন স্থিতিশীল হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি আলাদাভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে এক ধরনের মিশ্র প্রবণতা রয়েছে। একদিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বগতি চলছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান ও নিউজিল্যান্ডে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ২০২৪ সালেও চলতি বছরের মতোই স্থির থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রত্যাশিত ব্যয়ের ধরণ পরিবর্তন
২০২৪ সালে অর্থনৈতিকভাবে কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব আরও কমতে থাকবে। এর ধারাবাহিকতায় এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের ভোক্তারা নিত্যপণ্যের বাইরে নিজেদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ভ্রমণ ও বিনোদনের মতো বিষয়ে মোটামুটি হাত খুলে খরচ করতে পারবেন। ২০২২–২৩ সালে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মুদি বাজার তথা নিত্যপণ্য ও জ্বালানির মতো অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র কেনার পেছনেই ভোক্তাদের পারিবারিক বাজেটের একটি বড় অংশ চলে গিয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের বাইরে অন্যকিছুর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকদের কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হয়েছে।
মাস্টারকার্ডের এশিয়া প্যাসিফিক এর চিফ ইকোনমিস্ট ডেভিড ম্যান বলেন, ২০২৪ সালকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি বছর হিসেবে ধরা হয়েছে। কেননা আগামী বছর গ্রাহকরা তাদের বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনের উপাত্ত (ডেটা) অনুযায়ী, পরিস্থিতি ভেদে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন থাকলেও মানুষ সব সময়ই ভ্রমণ ও খাবার-দাবারের প্রতি আগ্রহী থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “সার্বিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। পাশাপাশি দেশ, ক্যাটাগরি এমনকি কোম্পানির অবস্থান অনুযায়ী গ্রাহকদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝতেও সহায়তা প্রদান করে।”
আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২৪ সালে গোটা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গ্রাহকদের চাহিদায় বড়সড় পরিবর্তন আসবে এবং তাঁরা ২০২৩ সালের তুলনায় পণ্য কেনাকাটায় বেশি পরিমাণে অর্থ ব্যয় করবে। ফলে পণ্যের বাজারে একটি নতুন চক্রের সূচনা হবে। তাতে পণ্যের জন্য ভোক্তাদের চাহিদা বেড়ে মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যেতে দেখা যাবে, ২০২২-২৩ সালের দিকেও যে চিত্র ছিল বিপরীত। এ সময় গ্রাহকরা স্বাভাবিক কার্যক্রম ও জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করে। তখন তাদের মধ্যে ভ্রমণ ও বাইরে খেতে যাওয়ার অভ্যেস আবারো বাড়তে শুরু করে।
২০২৪ সালে, পোশাক–পরিচ্ছদ ও গৃহস্থালীতে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সুবাদে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উৎপাদন খাত আবারও পুনরুজ্জীবিত হবে, যা মূলত বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে যেখানে উৎপাদন খাতকে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকতে এবং সেবা খাতকে বিকশিত হওয়ার দিকে এগোতে দেখা গেছে; সেখানে ২০২৪ সালে এশিয়া–প্যাসিফিক অঞ্চলের উৎপাদন খাতে ভালো প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা রয়েছে।