ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের কলেজপাড়ায় অনিক (১২) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে পৌর শহরের কলেজপাড়া মহল্লার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। মোহাম্মদ আলী সরকারি কলেজের অফিস সহকারী।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটি বাড়ির পাশের নদীর পানিতে ডুবে যায়। পরক্ষনেই জেলেরা জাল দিয়ে শিশুটিকে পানি থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরতরা চিকিৎসা না করেই মৃত ঘোষনা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পরে শিশুটিকে বাড়ি নেওয়ার পর তার শরীর গরম হয়ে মুখ দিয়ে পানি বের হলে শিশুটিকে পাশ্ববর্তী ডায়াবেটিকস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুনরায় সদর হাসপাতালে নেওয়ার হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
পরবর্তীতে শিশুর স্বজনেরা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ঘটনাস্থলে সদর থানা পুলিশও হাজির হয়। দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলার পর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: রাকিব এসে অনিকের স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। স্বজনেরা চিকিৎসায় অবহেলা ও স্বাস্থ্য সহকারী বাবুল হোসেনের হটকারী সিদ্ধান্তের কথা আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে জানালে তিনি সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বললে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা মৃত্যু সনদ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
শিশুর প্রতিবেশী সোহাগ হোসেন অভিযোগ করেন বলেন, আমরা প্রথমে অনিককে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী বাবুল হোসেন বলেন, আমার ১২ বছরের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাচ্চাটি মারা গেছে; তার ইসিজি লাগবে না। এ বলেই শিশুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। অনিককে পরে বাড়িতে নিয়ে গেলে মাটিতে শুইয়ে দিলে তার শরীর গরম দেখা যায় এবং মুখ দিয়ে পানি বের হয়। তখন পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে পাশ্ববর্তী ডায়াবেটিকস হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দেয়। পরক্ষণেই আবার অনিককে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্বিতীয়বার তাকে মৃত ঘোষনা করে।
সোহাগ আরও বলেন, সদর হাসপাতালে ইসিজির কোন যন্ত্র নেই। বাহিরে থেকে ভাড়া করে ইসিজি মেশিন নিয়ে আসা হলেও মেশিন পরিচালনাকারী পাওয়া যায়নি। অবহেলায় এভাবে আর কত অনিককে হারাবো আমরা? তিনি এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
স্বাস্থ্য সহকারী বাবুল হোসেন জানান, ওই সময় ডা: লিসা আক্তার ও ডা: সাবিনা ডিউটিতে ছিলেন। শিশুটিকে হাসপাতালে আনার পর ডা: সাবিনা শিশুটিকে ভালভাবে দেখে মৃত ঘোষনা করেন। তিনি কিছু বলেননি বলে জানান।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাকিব জানান, ওই সময় ডা: লিসা ও ডা: সাবিনা ডিউটিতে ছিলেন। পরবর্তীতে আমিও এসে বিক্ষোভ দেখতে পাই। রোগীর স্বজননেরা এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিলে পরবতর্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে কোন ইসিজি মেশিন নেই স্বীকার করে তিনি জানান এ কারনেই বাহিরে থেকে হয়তো ইসিজি মেশিন আনা হয়েছিল।