শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়ার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মহিবুল গ্রেপ্তার হলেই বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ৯৫

নিউজটি শেয়ার করুন

কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেট এলাকার প্রায় ১৭ কাঠা দামি সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার অন্যতম নায়ক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মহিবুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেই খুলবে নানা জট। ইতিমধ্যে যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান সুজনসহ এ চক্রের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। জমির আসল মালিক ও তাদের বোনদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি কোটি কোটি টাকার এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়ার ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় মহিবুল ইসলামসহ ১৮জনকে আসামী করা হয়েছে। সুজনসহ অন্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, দামি এ জমি হাতিয়ে নিতে প্রায় দুই বছর ধরে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। আর আড়ালে থেকে পুরো প্রক্রিয়ার আয়োজন করেন মহিবুল ইসলাম। মহিবুল এ জমি নিজের কজ্বায় নিতে তিন পক্ষকে কাজে লাগান। এর মধ্যে তার পক্ষে নকল ক্রেতা তৈরি, জমির ভূয়া মালিক সাজানো থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা ও এমনকি থানা পুলিশকে ম্যানেজের মত কাজ করেন। যাতে জমি পেতে কোন সমস্যা না হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি ফেঁসে গেছেন। কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে।

কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মৌজায় এম এম এ ওয়াদুদের পৈত্রিক জমি রয়েছে। জমির পরিমান প্রায় ১৭ কাঠা। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএম এ ওয়াদুদের বাবা এম এ হাকিমের মৃত্যুর পর কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন কালিশংকরপুর মৌজার ১১০নং এন এস রোডস্থ সম্পত্তির পৈত্রিক সূত্রে মালিক হন তিনি ও তার মা মোকসুদা খাতুন এবং তার বোন রিজিয়া খাতুন, বাসেরা খাতুন, সেলিমা কবির ও শামীমা খাতুন।
শহরের মূল কেন্দ্রে এ অবস্থিত হওয়ায় এ জমির দাম প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি হবে। এ জমির ওপরে শহরের অনেকের নজর রয়েছে। এমএম এ ওয়াদুদ দুর্বল লোক হওয়ায় ভূমিদস্যু একটি চক্র জমি হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে কয়েক বছর আগে।

এই চক্রের মাথা হিসেবে নাম উঠে আসে যুবলীগ নেতা সুজনের। সুজন এখানেই থেমে থাকেনি, তিনি শহরের এনএস রোডে এমএম এ ওয়াদুদের দোতলা বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তিও একই কৌশলে বিক্রির চেষ্টা করছিল। এছাড়া তিনি শহরের মজমপুর, চৌড়হাস ও বাহাদুরখালী মৌজার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া দলিল তৈরী করে আত্মসাতের চেষ্টা করে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বড় বাজার এলাকার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী ও হরিপুর এলাকায় বাড়ি মহিবুল ইসলাম জমি হাতিয়ে নিতে সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা করেন। এমএম এ ওয়াদুদরা ৬ ভাই বোন। মহিবুল কুমারখালী উপজেলার সালঘর মধুয়ার আতিয়ারের ছেলে মিলন হোসেন ও তার দুই বোন ছোনোয়ারা খাতুন ও জাহানারা খাতুনসহ ৬জনকে জমির মালিক সাজান। এদের নামে এনআইডি কার্ড তৈরি করা হয়। এ জন্য মিলন মেম্বরাকে কয়েক লাখ টাকা দেন মহিবুল। আন্টু তার আপন বোনসহ ৬জনকে ক্রেতা সাজান। তাদের প্রত্যেকের ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করা হয়। এরপর গত বছর এ জমি রেজিষ্ট্রি করা হয় ৭৭ লাখ টাকায়। এর আগে মহিবুল ইসলাম তারই দোকানের কর্মচারী মহিবুল হককে ক্রেতা সাজান। নামের সাথে মিল হওয়ায় তাকে বেছে নেন।
জমি কেনার পর দখল নিতে যাতে কোন সমস্যায় পড়তে না হয় সে জন্য আগে থেকে শহরের প্রভাবশালী একাধিক রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলেন। যেহেতু পানির দরে দাবি এ সম্পত্তি মহিবুল বাগিয়ে নেন এ জন্য তিনি নেতাদের পেছনে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেন। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা সুজনসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকে ম্যানেজ করেন।
এদিকে আদালতে নকল ক্রেতা মিরপুরের মহিবুল স্বীকার করেছেন তার মালিক আসল মহিবুল তাকে ৭৭ লাখ টাকা দেন জমি ক্রয় করার জন্য। আমি সরল বিশ্বাসে আমার নামে জমি ক্রয় করি। এর মধ্যে এত ঝামেলা আছে সে জানতো না বলে জানিয়েছে। তবে নকল মালিকসহ ক্রেতা সাজার জন্য তাদের প্রত্যেকের নগদ টাকা দেন মহিবুল ইসলাম।

এদিকে থানায় মামলার পর থেকেই বেঙ্গল হার্ডওয়্যারের মালিক মহিবুল ইসলাম পলাতক রয়েছে। পুলিশের একটি সুত্র জানায়, জমি হাতিয়ে নিতে মহিবুল তিন পক্ষকে কাজে লাগায়। ক্রেতা ও জমির মালিক সাজানো এবং মাস্তান ও বা নেতাদের মাধ্যমে চাপ তৈরির প্রক্রিয়া করে রাখেন। এমনকি পুলিশকেও ব্যবহারের চেষ্টা করেন জমি দখল নিতে। সুজন ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জমি দখল নিতে মূল মালিক ওয়াদুদকে চাপ দিলে স্থানীয়রা বাঁধাও সৃষ্টি করেন।
এদিকে ১৮জনের নাম আসায় তাদের নামে মামলা হয়েছে। এর পেছনে আরো অনেকের হাত রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

জমির মালিক এম এম এ ওয়াদুদ বলেন,‘ এক বছর আগে ভূমি অফিসে গিয়ে বিষয়টি আমি জানতে পারি আমার সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর আমি লিখিত অভিযোগ করি নির্বাচন কমিশনে। তারা ভূয়া আইডি কার্ডগুলো সার্ভার থেকে বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে নির্বাচন অফিস থেকে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা মেলে। তবে জেলা প্রশাসককে একটি তদন্ত করার নির্দেশনা দিলে তিনি কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তবে বিষয়টি তদন্ত না করে তারা ফেলে রাখেন। এখন তারা সরব হয়েছেন।’ পাঁচ রাস্তার মোড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন,‘ জমি দখল নিতে আসলে আমরা বাঁধা সৃষ্টি করি। এতে অনেকেই আমাদের ক্ষুব্ধ হন।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন,‘ পুলিশ আন্তারিকভাবে কাজ করছে। মামলা হওয়ার আগেই ৪ জনকে আটক করে। মামলার পর আরো ২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন অর্থদাতা মহিবুল গ্রেপ্তার হলেই অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে। আশা করছি দ্রুত সময়ে মহিবুল গ্রেপ্তার হবে। আমরা অনেক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করছি। যাদের নাম আসবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’

এদিকে নকল আইডি কার্ড দেয়ার কারনে ফেঁসে যাচ্ছেন দুই কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই সাথে কুমারখালীর বাসিন্দা হয়েও মিলনসহ তার বোনেরা কি করে সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি থেকে জন্ম নিবন্ধন পেল সেটিও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x