বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

ত্রুটিপূর্ণ করারোপ পদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছে তামাক কোম্পানি

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে বর্তমানে প্রচলিত অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ফলে প্রতিবছর তামাক কোম্পানির লাভ বিশ্ময়করভাবে বাড়ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। একইসঙ্গে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না। জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ করারোপ পদ্ধতিতে তামাক কোম্পানী লাভবান হচ্ছে আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

সম্প্রতি “তামাকের কর ব্যবস্থা, তামাক কোম্পানির লাভে সরকারের ক্ষতি“ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনলাইন মিটিং সফটওয়ার জুমে ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আব্দুল্লাহ এবং সঞ্চালনা করেন, বিএনটিটিপি এর প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির দ্বিগুণ উৎপাদ বৃদ্ধির বিপরীতে মুনাফা বেড়েছে ৫ গুণ। সেই অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। ফলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্যে বিদ্যমান অ্যাড ভেলোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপের কোনো বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ মারা যায় যা কভিড-১৯ মহামারীতে বছরে গড় মৃত্যুর ১০ গুণেরও বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের কারণে দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতিরপরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা একই সময়ে রাজস্ব আয় মাত্র ২২,৮৬৬ কোটি টাকা। অসুস্থ্যতা, মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতির সাথে রাজস্ব আয় বিবেচনা করলে দেখা যায় তামাক সেবনের কারণে শুধুমাত্র তামাক কোম্পানী লাভবান হয়। বিপরীতে জনগণ ও সরকারসহ সব পক্ষ ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়। ত্রুটিপূর্ণ করারোপ ব্যবস্থার কারণে এই সংকট বেড়েই চলেছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তণ করতে হবে।

ওয়েবিনারে এসএম আবদুল্লাহ দেশের তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করারোপের বিধান রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করারোপের সুপারিশ তুলে ধরেন। বাজেট প্রস্তাবে নিম্ন স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

পাশাপাশি ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের সুপারিশ হয়েছে।

এছাড়া সকল তামাকজাত দ্রব্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ পূর্বের ন্যায় বহাল রাখারও প্রস্তাব জানান তারা।

ওয়েবিনা তারা আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের উপর্যুক্ত মূল্য বৃদ্ধি এবং করারোপের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ১৩ লক্ষ প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দেবে এবং প্রায় ৯ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ৯ লক্ষ তামাক ব্যবহারকারীর জীবন রক্ষা হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আয় প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে।

ওয়েবিনারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞসহ বাংলাদেশে কর্মরত তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রায় অর্ধশত প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x