শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সিগারেট কোম্পানি

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৩

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশে সকল পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যে বিক্রি হলেও সিগারেট ও বিড়ির ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করছে না উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সিগারেট কোম্পানিগুলো খুচরা মূলে বিক্রেতাদের কাছে সিগারেট বিক্রি করছে, আর বিক্রেতারা তারা চেয়ে বেশি মুল্যে ক্রেতাদের নিকট সিগারেট বিক্রি করছে। সর্বত্র প্যাকেটের গায়ে উল্লিখিত সর্বোচ্চ দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রয় মূল্যের ওপর কর আদায় সম্ভব হলে চলতি অর্থবছরেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো। আর এভাবে বছরের পর বছর তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো।

তামাকজাত দ্রব্যের (সিগারেট ও বিড়ি) খুচরা ও পাইকারি বিক্রয়মূল্যে জাতীয় বাজেটে মূল্য ও কর পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণে একটি সমীক্ষা” শীর্ষক একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সকাল সাড়ে ১০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) এর সম্মেলন কক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিইআর ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ গবেষণার ফল প্রকাশ করে। এ গবেষণার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।

গবেষণার ফল উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, অতিউচ্চ স্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৭০ টাকা হলেও বিক্রি করা হয় গড়ে ২৯৪.২৯ টাকায়। উচ্চ স্তরের সিগারেট ২০৪ টাকার পরিবর্তে গড়ে প্রায় ২২৯.৮৮ টাকায়, মধ্যম স্তরের সিগারেট ১২৬ টাকার পরিবর্তে ১৩৫.৮৬ টাকায় এবং নিম্ন স্তরের সিগারেট ৭৮ টাকার পরিবর্তে ৯৫.১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিড়ির ক্ষেত্রেও এভাবে সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এভাবে সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট-বিড়ি বিক্রি অব্যাহত থাকায় প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

পাইকারি দোকানেও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট ও বিড়ি বিক্রি হয় বলেও এ গবেষণায় উঠে এসেছে। প্রকাশিত এ গবেষণাটি মূলত পরিমাণগত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বিভাগীয় শহরসহ আরো ২টি জেলা শহর মিলে মোট ১২টি শহর থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শহর থেকে চারটি করে মোট ৪৮টি খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংজ্ঞায়িত পাবলিক প্লেসের খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে এ তথ্য নেয়া হয়েছে। এছাড়া উল্লিখিত ১২টি শহর থেকে দুটি করে মোট ২৪টি পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্য নেয়া হয়েছে।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এবং ফাঁকি বন্ধ করতে অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দ্রব্যের বাজার ও বিক্রয়  পর্যবেক্ষণে এবং কর আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে; সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো ধারাবাহিকভাবে এক স্তরে নিয়ে আসতে হবে; সিগারেট ও বিড়ির খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সামগ্রিক সমস্যা মোকাবেলা করতে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x