শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

গত ১২ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার সময় টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানাধীন বাংড়া পূর্ব পাড়া সাকিনস্থ সৌদি আরব প্রবাসী জাহিদ হোসেন ওরফে ময়নাল এর বসতঘরে তার স্ত্রী লিমা আক্তার (২৮)কে তার পরিবারের লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

রাতের বেলায় নিজ গৃহে প্রবাসীর স্ত্রী খুনের ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। উক্ত ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, জনাব মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর সার্বিক নির্দেশনায় সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে ওয়াসিম (৩২) পিতা- মৃত ফজল মিয়া, সাং- বাংড়া (পূর্ব পাড়া), থানা- বাসাইল, জেলা- টাঙ্গাইল এর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এলআইসি’র একটি চৌকস টীম অভিযান পরিচালনা করে ইং ১৯/০৪/২০২২ তারিখ দিবাগত রাতে আশুলিয়া হতে মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামী- ওয়াসিম (৩২) কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানায় যে, সে পেশায় একজন ট্রাক চালক। গাড়ি চালিয়ে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রায়ই তার সহকর্মীদের সাথে জুয়া খেলার কারণে নিয়মিত সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। সেজন্য প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী ময়নাল এর স্ত্রী তার ভাবী লিমা আক্তারের নিকট হতে প্রায়ই নগদ টাকা ধার করে সংসার চালাতেন।

কিন্তু আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে কোন টাকা পয়সা পরিশোধ না করে নিত্য নতুন ফন্দি ফিকির এটে ধারের পরিমাণ বাড়াতে থাকে। এদিকে লিমা আক্তারের স্বামী ময়নাল সৌদি আরব থেকে এরই মধ্যে দেশে আসার কথা। স্বামী দেশে আসার দিন যতো ঘনিয়ে আসতে থাকে স্ত্রী লিমা আক্তারের দুশ্চিন্তা ততোই বাড়তে থাকে। বিদেশে স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা কোন ধরণের সাক্ষী না রেখে স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকে প্রতিবেশী জুয়াড়ী দেবরকে প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা ধার দিয়েও কোন টাকা ফেরত পাওয়ার আশা না থাকায় দেনাদার ওয়াসিমকে পেয়ে সে গাল- মন্দ করে। সে পাওনা টাকা ফেরত না দিলে তার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসানো ও আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বলায় সে ক্ষিপ্ত হয়। সে ধারের টাকা আত্মসাৎ করার এবং তাকে অপমান করার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ইং ১২/০৪/২০২২ তারিখ রাতে ওয়াসিম ভাবী লিমা আক্তারের ঘরের সামনে যেয়ে তার পাওনা টাকা নিয়ে এসেছে এবং দরজা খোলে টাকা নেয়ার জন্য বলে। তখন লিমা আক্তার দরজা খুললে সে তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে যায়। তার হাতে থাকা ইট দিয়ে উপর্যুপরি লিমা আক্তারের মাথা বরাবর আঘাত করলে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে লিমা আক্তার মাটিতে পড়ে যায়। তখন ঘরের মধ্যে থাকা ৪ বছর বয়সী লিমা আক্তারের শিশু সন্তান তাওহীদ ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকলে আসামী ওয়াসিম দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। শিশু তাওহীদের চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা তার দাদা মোঃ জোয়াহের আলী মিয়া তার ঘর থেকে বের হয়ে লিমার ঘরের দিকে যাওয়ার সময় ওয়াসিমকে দেখতে পেয়ে তাকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করে। ওয়াসিম তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে পালিয়ে গেলে দাদা উক্ত ঘরের ভিতর শিশু তাওহীদকে ক্রন্দনরত এবং ছেলের বউ লিমা আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। তার ডাক-চিৎকার দিলে আশপাশের আত্মীয় স্বজন এগিয়ে এসে লিমা আক্তারকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ভিকটিম লিমা এর শ্বশুর মোঃ জোয়াহের আলী মিয়া (৭০) পরে ওয়াসিমের এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার মামলা নং- ০৪/৩৪, তারিখ- ১৩/০৪/২০২২ ইং ধারা- ৩০২ পেনাল কোড-১৮৬০ রুজু হয়। ৪ বছরের শিশু সন্তানের সামনে প্রবাসীর স্ত্রীকে এরুপ নির্মমভাবে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার আসামীকে দ্রæততম সময়ে অবস্থান সনাক্ত পূর্বক গ্রেফতার সিআইডি তথা বাংলাদেশ পুলিশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x