বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০২:০৭ অপরাহ্ন

শতবাধা ডিঙ্গিতে চার সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করলেন জুলেখা

অর্থনীতি ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩

নিউজটি শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের  কুলিয়ারচর উপজেলার বাসিন্দা মোছা: জুলেখা খাতুন (৫০)।  নিজের তেমন পড়াশোনা না থাকলেও স্বপ্ন দেখতেন সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। তারা যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ।  সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কারন কুসংস্কার, শিক্ষার অভাবসহ শত বাধাও ঠেকাতে পারেনি তার চার সন্তানের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রশ্নে। সবাই পড়াশোনা সম্পূর্ণ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ স্বায়ত্ত¡শাসিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

এদের মধ্যে বড় ছেলে শামীম আহামেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে কর্মরত আছে ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগে। শত কষ্টের মাঝেও জুলেখা খাতুনের পরিবারের এমন উত্থানে এখন স্থানীয়রাও প্রসংসায় পঞ্চমুখর।
জুলেখা জন্ম কিশোরগঞ্জের  কুলিয়ারচর উপজেলা ছয়সূতি ইউনিয়নের গাজী বাড়িতে । নিজের মাকে হারান শ্রেণিতে পড়ার সময়। পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও আর পড়াশোনা করতে পারেন নি। বাবার সংসার সামলিয়ে দিন যেতে থাকলো। এর মধ্যে বিয়ে  হয়ে জীবনের এক নতুন অধ্যায় শুরু ।
একই উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নে (স্বামীর বাড়ি) এসে দেখেন ওই এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক অভাব ও সামাজিক কুসংস্কারসহ নানা বাঁধা। স্বামীর বাড়িতে শিক্ষা ব্যবস্থা শূন্যের কোটায় । তবে তিনি থেমে থাকেননি। নিজের ভিতরে  সুপ্ত অনুরাগের বিকাশ ঘটান তার সাংসারিক জীবনে ছেলে-মেয়েদের মাধ্যমে।

স্থানীয়রা জানান, শত কষ্টের সংসার জীবনে সারা দিন কাজ করে রাতে নিজের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। আশে পাশের মানুষ কে পড়াশোনা করানোর জন্য নানাভাবে উৎসাহ দিতেন। তবে কেউ তেমন আমলে নিতেন না। তবুও তিনি থেমে থাকেননি জুলেখা। সাহসের সাথে এগিয়ে গেছেন। তার ধারণা একদিন সমাজে সুন্দর পরিবর্তন আসবে। তার ৪ ছেলেমেয়ে এখন এলাকার গর্ব। তার পরিবার এবং আমাদের সমাজে পরিবর্তন আসবেই। তার পরিশ্রম সঠিক পথে হয়েছে।
জুলেখার চার সন্তান:
বড় ছেলে শামীম আহামেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে কর্মরত আছে বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগে।ি দ্বতীয় ছেলে নাজমুল হাসান শাহীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন । মেয়ে সালমা সুলতানা পড়াশোনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। ৩.৭১ সিজিপিএ নিয়ে বিভাগে তৃতীয় স্থানের অধিকারী। চতুর্থ ছেলে পড়াশোনা করছেন ভৈরব সরকারি হাজি আসমত কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে।
যা বললেন জুলেখা:
আমি নিজে এত লেখা-পড়া করতে পারি নাই। বংশে কেউ সরকারি চাকরিজীবি ছিলো না। অনেকে বলত ছেলে-মেয়েরা পড়াইয়া কি অইবো, তাদের কাজে দিলে বরং কিছু টাকা আইবো সংসারে। চলতে কষ্ট হইবো না। এগুলেঅ কানে নেয়নি।  স্বপ্ন আছিলো কষ্ট হইলো মেয়ে-ছেলেরারে পড়া-লেখা করানোর। স্বাশসিহ চেষ্টা করছি, আল্লাহর দয়ায় ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখায় ভালো করছে। বড় ছেলের সরকারি চাকরি হইলো। অন্যরাও ভালো কিছ‚ করার চেষ্টা করতাছে। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার সবাই  এখন খুশি। তাই আগের কষ্ট আর কষ্ট মনে হয় না। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুক, তাদের মনের সকল আমা পূরণ করুক। এতেই শান্তি পাই।

 

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x