বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন

পঁচাত্তরে বিটিভির চার কর্মকর্তা হত্যা মামলায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২

নিউজটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ টেলিভিশনের চার কর্মকর্তা হত্যা মামলায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট। দেশ স্বাধীনের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর পট পরিবর্তনের মধ্যে এ চার কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছি।

মামলাটি বাতিল প্রশ্নে রুল খারিজ করে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রায় দেন।

রায়ে মামলার বিচারকাজে এক যুগ আগের স্থগিতাদেশ তুলে নেন উচ্চ আদালত। ফলে মামলাটির বিচারকাজ চলতে কোনো বাধা থাকছে না বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিটিভি ও বেতার স্টেশনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তখন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিটিভির তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আন্দোলন চলছিল। বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্মচারীদের দাবি মানতে নারাজ ছিল। সে আন্দোলনের সময় রামপুরা টিভি ভবনে নিয়োজিত ছিলেন সেনাবাহিনীর হাবিলদার আলতাফ হোসেন।
আন্দোলনের এক পর্যাময়ে ওই বছর ৭ নভেম্বর বিটিভির তৎকালীন উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) মনিরুল আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ এফ এম সিদ্দিক, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আকমল খান ও চিত্রগ্রাহক ফিরোজ কাইয়ুম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তুলে নেওয়া হলেও পরে আর এই চার কর্মকর্তার খোঁজ মেলেনি। পরে ১৯৭৫ সালের ১৯ নভেম্বর নিখোঁজ কর্মকর্তাদের স্ত্রীরা গুলশান থানায় অপহরণ মামলা করেন। নিখোঁজের সাড়ে তিন মাস পর বিটিভি ভবনের পেছনের ঝিল থেকে ১৯৭৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পরীক্ষার পর কঙ্কালগুলো মনিরুল, সিদ্দিক ও আকমলের বলে চিহ্নিত করলেও কাইয়ুমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, এর দুই বছর পর মামলাটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। অপহরণের অভিযোগের সাথে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ওই বছর ২৫ নভেম্বর আকমলের স্ত্রী মামলা পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। পরের বছর মামলিাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। ১৯৯৭ সালের ২৫ মার্চ সিআইডি মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত আবেদন করে। আদালত আবেদন গ্রহণ করলে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৯৯৯ সালের ১৮ আগস্ট আলতাফ হোসেনসহ নয়জনের অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। তখন অপহরণের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারও করে। পরে তারা জামিন পান। ২০০২ সালের ৭ আগস্ট মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট নয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। কিন্তু তার আগে মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন আলতাফ। ওই বছর ২৫ মে হাইকোর্ট মামলা বাতিল প্রশ্নে রুল দেন। এরপর ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টের দেওয়া রুল ও স্থগিতাদেশের বিষয়টি চলতি মাসের শুরুতে আদালতে তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া। আলতাফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. ওয়াজি উল্লাহ, মো. হারুন অর রশিদ ও শেখ রেজাউল হক।

এ জাতীয় আরো খবর..

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত আজকের অর্থনীতি ২০১৯।

কারিগরি সহযোগিতায়:
x